ঝালকাঠি প্রতিনিধি ॥ ঝালকাঠি জেলার অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট বাণিজ্েযর অভিযোগ উঠেছে। অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিদ্যালয়গুলো অ্যাসাইনমেন্টের জন্য টাকা নিচ্ছে। তবে, সরকারি নির্দেশনার প্রসঙ্গ তুলে চ্যালেঞ্জ করলেই শিক্ষকরা বলছেন, অ্যাসাইনমেন্ট নয়। বিদ্যুৎ বিল, বেতন, সেশন ফি, পরীক্ষার ফি-বাবত এই টাকা নেওয়া হচ্ছে। এদিকে, জেলা শিক্ষা অফিস বলছে, অ্যাসাইনমেন্ট তো নয়ই, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন কিংবা অন্য কোনো খরচই নেওয়া যাবে না। সরেজমিন দেখা গেছে, রাজাপুর সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৭ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। শ্রেণিভেদে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী করোনার সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সব ধরনের অর্থ আদায়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এরপরও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘হোম অ্যাসাইনমেন্ট’-এর জন্য টাকা নেওয়ায় অনেক অভিভাবক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিয়োগ করেছেন। একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর বলে—‘অ্যাসাইনমেন্টের জন্য বিদ্যালয় থেকে গত সপ্তাহে ৭৩৫ টাকা চেয়েছে। সোমবার টাকা দিয়েছি। ’
এই শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘প্রথমে অ্যাসাইনমেন্টের কথা বলে টাকা নেয়। সরকারি নির্দেশনার কথা বলে যখন চ্যালেঞ্জ করি, তখন বলে বেতনসহ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন খরচের জন্য নেওয়া হচ্ছে। এর মানে হচ্ছে টাকা তাদের নিতেই হবে, সেটা যেভাবে হোক।’ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের অভিযোগ—‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করেছে।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজাপুর সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা গাজী বলেন, ‘আমরা অ্যাসাইনমেন্টের জন্য কোনো টাকা-পয়সা নিচ্ছি না। যারা অভিযোগ করেছেন, তারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। সরকারি নির্দেশনা মেনেই কাজ করছি। ’ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ—নলছিটি উপজেলার সুবিদপুর বিজি ইউনিয়ন অ্যাকাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খাগড়াখানা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিদ্যালয় অ্যাসাইনমেন্ট ফি নিলেও রশিদ দিচ্ছে বেতন আদায়ের। রশিদে ১৯টি বিষয়ের বিবরণ থাকলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট কোনো বিষয় ছাড়াই ৭০০ থেকে ৮৮০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। করোনার মধ্যে বিদ্যালয় বন্ধ। নেই পাঠদান কার্যক্রমও। অথচ এসব বিদ্যালয়ে বেতনও নেওয়া হচ্ছে। উপজেলার সুবিদপুর বিজি ইউনিয়ন অ্যাকাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী লিয়া আক্তারের মা নুসরাত জাহান বলেন, ‘আমার কাছ থেকে ৭০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। বাড়িতে বসে পরীক্ষা। তাই খাতা আমাদের কিনতে হবে। তাহলে কেন টাকা দেবো? শুধু আমার কাছ থেকেই নয় সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকেই টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।’
একই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিভাবক নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘আমার মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। আমার কাছ থেকে ৬০০ টাকা নিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জানতে চাইলে, তারা একটি রশিদ ধরিয়ে দেয়।’ এ ব্যাপারে সুবিদপুর বিজি ইউনিয়ন অ্যাকাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আহম্মেদ বলেন, ‘অ্যাসাইনমেন্ট ফি নিচ্ছি না। বিদ্যালয়ের বেতনসহ অন্যান্য খরচের টাকা নিচ্ছি। এজন্য রশিদও দিচ্ছি।’
যেকোনো ধরনের টাকা না নেওয়ার বিষয়ে সরকারি আদেশ প্রসঙ্গে আলী আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের কাছে এই ধরনের কোনো নির্দেশনা নেই। ’ বিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঝালকাঠি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের অভিমত নিয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ঘোষণা দিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এখন কোনো ধরনের টাকা নেওয়া যাবে না। অ্যাসাইনমেন্টের জন্য কোনো ফি নেই। এছাড়া, বিদ্যালয়ের বেতনসহ আনুষঙ্গিক কোনো খরচও নেওয়া যাবে না। যারা টাকা নিচ্ছেন, তারা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নিচ্ছেন।’ কেউ লিখিত অভিযোগ জানালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
Leave a Reply